মণিপাল হসপিটালস কলকাতায় চালু করল অত্যাধুনিক ‘মণিপাল অ্যাম্বুলেন্স রেসপন্স সার্ভিস

ইন্দ্রজিৎ আইচ (কলকাতা): মণিপাল হসপিটালস কলকাতা আজ শহরে নিউ টাউনের এর তাজ তাল কুটিরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল তাদের মণিপাল অ্যাম্বুলেন্স রেসপন্স সার্ভিস (MARS) – যা পূর্বাঞ্চলের জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই সম্প্রসারণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মণিপাল হসপিটালস ১৭টি অত্যাধুনিক মণিপাল অ্যাম্বুলেন্সের একটি শক্তিশালী বহর উদ্বোধন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫টি অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক লাইফ সাপোর্ট (ACLS) ইউনিট এবং ১২টি বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) ইউনিট। পাশাপাশি, সেই সাথে থাকছে ২০টি কলকাতা অ্যাক্সিডেন্ট রেসপন্স অ্যান্ড মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (KARMA) অ্যাম্বুলেন্স, যা কলকাতা পুলিশ ও মণিপাল হসপিটাল ইএম বাইপাস-এর যৌথ অংশীদারত্বে পরিচালিত হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের বিশেষায়িত জরুরি সহায়তা ও গোল্ডেন-আওয়ার ইন্টারভেনশন প্রদান করে।
মণিপাল হসপিটালস বর্তমানে তাদের নেটওয়ার্ক জুড়ে ১০০-রও বেশি MARS অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনা করছে, যা প্রতিদিন ৫০০-রও বেশি জরুরি কলের সাড়া দিচ্ছে।ছMARS-এর বিশেষ শক্তি
• উপযুক্ত রোগী সেবার জন্য অত্যাধুনিক লাইফ-সেভিং সরঞ্জামসহ উন্নত ACLS এবং BLS অ্যাম্বুলেন্স
• প্রশিক্ষিত পেশাদারদের দ্বারা পরিচালিত ২৪×৭ কার্যক্রম
• দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য ২৪×৭ প্রযুক্তি-নির্ভর কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টার
• জরুরি অবস্থায় ২৪×৭ চিকিৎসকের সহায়তা
• অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দের জন্য আধুনিক ডিজিটালাইজড অটো-অ্যাসাইনমেন্ট সিস্টেম
• প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য GPS ট্র্যাকিং এবং রিয়েল-টাইম আপডেট
• QR কোড-সক্ষম স্মার্ট ট্র্যাকিং এবং লোকেশন শেয়ারিং
• মণিপাল নেটওয়ার্কের একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে নির্বিঘ্ন সমন্বয়
• পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যাম্বুলেন্স ফ্লিট, যেখানে রয়েছে ১৭টি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স
• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে রক্ষণাবেক্ষিত অ্যাম্বুলেন্স, যা রোগীর নিরাপত্তা ও আরামের নিশ্চয়তা দেয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের একাধিক শীর্ষকর্তা – শ্রী মুকেশ, IPS, পুলিশ কমিশনার, বিধাননগর কমিশনারেট; শ্রী রূপেশ কুমার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), কলকাতা পুলিশ; শ্রী ইয়েলওয়াড শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও, IPS, ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক), কলকাতা পুলিশ; ও শ্রী নির্মা নর্বু ভুটিয়া, ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক), বিধাননগর সিটি পুলিশ।

মণিপাল হসপিটালস-এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন—ড. মেবেল ভাসনাইক, চেয়ারপার্সন ও প্রধান, ইমার্জেন্সি মেডিসিন, মণিপাল হসপিটালস বেঙ্গালুরু এবং ২০১৪ সাল থেকে MARS উদ্যোগের মূল সহযোগী; মি. মধুর গোপাল, ভাইস প্রেসিডেন্ট – মার্কেটিং, মণিপাল হেলথ এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড, ড. ইন্দ্রনীল দাস, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রধান – অ্যাক্সিডেন্ট ও ইমার্জেন্সি কেয়ার, মণিপাল হসপিটাল EM বাইপাস; ড. কিশেন গোয়েল, কনসালট্যান্ট ও প্রধান – ইমার্জেন্সি, মণিপাল হসপিটাল ব্রডওয়ে; ড. সুজয় দাশ ঠাকুর, কনসালট্যান্ট ও ইন-চার্জ – ইমার্জেন্সি মেডিসিন, মণিপাল হসপিটাল মুখুন্দপুর; এবং ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত, রিজিওনাল COO, মণিপাল হসপিটালস ইস্ট।
MARS হল মণিপালের ফ্ল্যাগশিপ প্রিহসপিটাল ইমার্জেন্সি কেয়ার প্রোগ্রাম, যা আঘাতের পর প্রথম ‘স্বর্ণালী ঘণ্টা’-তেই পূর্ণাঙ্গ প্রিহসপিটাল ইন্টারভেনশন নিশ্চিত করে। দেশজুড়ে মণিপাল হসপিটালস-এর অ্যাম্বুলেন্স বহর একাধিক আধুনিক লাইফ-সেভিং সরঞ্জামে সজ্জিত—যার মধ্যে রয়েছে ECG মেশিন, ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, মাল্টি-প্যারামিটার মনিটরিং সিস্টেম, সিরিঞ্জ পাম্প এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্রিটিক্যাল কেয়ার যন্ত্রপাতি, যা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাথমিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
প্রতিটি MARS জরুরি কল প্রশিক্ষিত ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম দ্বারা ট্রায়াজ করা হয়, এবং তথ্যের ভিত্তিতে নিকটতম অ্যাম্বুলেন্সকে পাঠানো হয়। জীবনহানি বা গুরুতর অক্ষমতার ঝুঁকি থাকলে কলটি ২৪/৭ অন-কল জরুরি চিকিৎসকের কাছে এস্কেলেট করা হয়, যিনি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রতিটি MARS ড্রাইভার BLS-সার্টিফাইড এবং প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সে দুইজন EMT উপস্থিত থাকেন, যারা প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্টেবিলাইজেশন নিশ্চিত করেন এবং ALS-সার্টিফাইড চিকিৎসকদের সাথে লাইভ ক্লিনিকাল আপডেট শেয়ার করেন। ফলে জরুরি কল থেকে হাসপাতালে পৌঁছানো পর্যন্ত রোগীকে ধারাবাহিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় – যা গত ২৫ বছর ধরে জরুরি পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মণিপালের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন।
কলকাতা শহরের ভেতরে গুরুতর বা জীবন-সংশয়ী পরিস্থিতিতে যেসব রোগী মণিপাল হসপিটালস-এর যেকোনো ইউনিটে ভর্তি হতে MARS অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করবেন, তারা বিনামূল্যে হাসপাতাল পর্যন্ত পরিবহণ সুবিধা পাবেন।
ড. ইন্দ্রনীল দাস বলেন, “ভারতে দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ার ফলে বহু রোগীর অবনতি দেখা যায়—বিশেষ করে হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে। কলকাতায় হার্ট অ্যাটাক এবং নিউরোলজিকাল ইমার্জেন্সি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে MARS-এর সূচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের কেন্দ্রীকৃত মনিটরিং ও দ্রুত ডিপ্লয়মেন্ট পদ্ধতি প্রতিক্রিয়ার সময় কমিয়ে এনে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক রোগীদের বাঁচার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করবে।”
ড. কিশেন গোয়েল বলেন, “ইমার্জেন্সি চিকিৎসায় প্রতি মিনিট সাশ্রয় করা মানে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ১০% পর্যন্ত বাড়ানো। কলকাতার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই চিকিৎসা শুরু করা না হওয়া। MARS এই ফাঁক পূরণ করছে। উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত ইমার্জেন্সি বিশেষজ্ঞরা অ্যাম্বুলেন্সেই চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। এটি শহরের ইমার্জেন্সি রেসপন্স ব্যবস্থার জন্য এক বড় পরিবর্তন।”
ড. সুজয় দাশ ঠাকুর বলেন, “শহরে ট্রমা ও সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সময়মতো প্রিহসপিটাল কেয়ার প্রায় ২৫–৩০% মৃত্যুহার কমাতে পারে। ১৬টি মণিপাল অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ৪০টি KARMA অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত হওয়ায় পূর্ব ভারতে এটি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ইমার্জেন্সি রেসপন্স নেটওয়ার্কগুলির একটি।”
উদ্বোধন সম্পর্কে ড. অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, “আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দ্রুত প্রিহসপিটাল ইন্টারভেনশন মৃত্যুহার ৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিট দেরি হলে বাঁচার সম্ভাবনা ৭–১০% কমে যায়। তাই জরুরি রেসপন্সের গতি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। MARS-এর সূচনা আমাদের জরুরি পরিষেবাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে এবং আরও বেশি প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করবে।”
MARS সম্পূর্ণরূপে চালু হওয়ার ফলে মণিপাল হসপিটালস ইস্ট এখন পূর্ব ভারতের জরুরি পরিষেবাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে প্রস্তুত—যেখানে চিকিৎসা আর হাসপাতালের দরজায় নয়, জরুরি কল করার মুহূর্ত থেকেই শুরু হবে।

Comments

Popular posts from this blog

দক্ষিণ ২৪পরগনা ঠাকুরপুকুর সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নতুন প্রযুক্তির রেডিওথেরাপি মেশিন এর শুভ উদ্বোধন

SH Binayak Multi-speciality Hospital, in association with the Institute of Breast Disease Kolkata and Asian Medical Foundation, launches "SNEHA SPARSHA" - A Dedicated Homecare Initiative for Cancer Patients

बैंक ऑफ इंडिया ऑफिसर्स एसोसिएशन ! पूर्वी भारत शाखाओं की, 60वीं वार्षिक आम सभा की बैठक !