ঢাকুরিয়ায় ‘মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস’-এর উদ্বোধন ও ইএম বাইপাসে সচেতনতা কর্মসূচি

ইন্দ্রজিৎ আইচ (কলকাতা): ডায়াবেটিস রোগ এখন বহু মানুষের শরীরে নিঃশব্দে সঞ্চারিত হচ্ছে। সেখানে থেকে শরীরের অন্যান্য অর্গান সংক্রমিত হচ্ছে। এই ডায়াবিটিস কে নির্মূল করতে এবং এই রোগ সর্ম্পকে জন সচেতনতা বাড়াতে ভারতের অন্যতম শীর্ষ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মণিপাল হাসপাতাল গ্রুপ-এর দুটি ইউনিট — ঢাকুরিয়া ও ইএম বাইপাস — বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে দুটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত 12 ই নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়া ইউনিটে চালু হয়েছে নতুন মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস, আর ইএম বাইপাস ইউনিটে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি। এই দুই অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত অলিম্পিয়ান শ্যুটার ও অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত জয়দীপ কর্মকার।
দুই হাসপাতালের এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন করা — যেন সবাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত জীবনযাপনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন।
অনুষ্ঠানগুলিতে চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বার্তা দেন।
মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস, ঢাকুরিয়া ইউনিটে একত্রিত হয়েছে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক — ডা. সুজয় ঘোষ (কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. অমল কুমার সিনহা (কনসালট্যান্ট – ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. মনোজিৎ কেতন মুখোপাধ্যায় (সিনিয়র কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. অনির্বাণ সিনহা (কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. উমাকান্ত মহাপাত্র (কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. সোহম তরফদার (কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি) এবং ডা. শিলাদিত্য নন্দী (কনসালট্যান্ট – এন্ডোক্রাইনোলজি)। এই ইনস্টিটিউট চিকিৎসার পাশাপাশি রোগী শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি রোগ নির্ণয়ের পর সঠিক পরামর্শ ও সহায়তা পান। চিকিৎসক দল সার্বক্ষণিকভাবে রোগীদের পাশে থেকে পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন।
বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস এখন এক বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ না করলে এই রোগের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, তাই বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র ও জনসচেতনতা প্রচার এখন অত্যন্ত জরুরি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. সুজয় ঘোষ বলেন, “ডায়াবেটিস আজ নির্দিষ্ট কোনো বয়সের রোগ নয়; এটি শিশু থেকে শুরু করে তরুণ ও প্রবীণ—সব বয়সের মানুষকেই প্রভাবিত করছে। বর্তমানে ভারতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, এবং এই সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো এই ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যচ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত চিকিৎসা প্রদান করা। উন্নত ডায়াগনস্টিক, চিকিৎসা দক্ষতা এবং রোগী শিক্ষাকে একত্রিত করে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, সংগঠিত ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘমেয়াদি জীবনধারা সহায়তা নিশ্চিত করতে চাই, যাতে মানুষ আরও স্বাস্থ্যকর ও সচেতন জীবনযাপন করতে পারেন।”
ইএম বাইপাস ইউনিটে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল একাধিক সচেতনতা কার্যক্রম। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল ‘সুগার মনস্টার’ নামে একটি অভিনব ইনস্টলেশন, যা দৈনন্দিন খাবারে লুকিয়ে থাকা চিনি সম্পর্কে মানুষকে চাক্ষুষভাবে সচেতন করেছে। এই উদ্যোগটি পরিবার ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও, হাসপাতাল প্রকাশ করেছে একটি ডায়াবেটিস সচেতনতা বুকলেট এবং একটি তথ্য পোস্টার, যেখানে প্রাথমিক উপসর্গ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং জীবনযাপনের গুরুত্ব নিয়ে সহজ ভাষায় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মণিপাল হাসপাতাল ইএম বাইপাসের বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ — ডা. শুভঙ্কর চৌধুরী (সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান, ডায়াবেটোলজি ও এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. উত্তিও গুপ্ত (কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি), ডা. কৌশিক বিশ্বাস (সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি) এবং ডা. শেখ হাম্মাদুর রহমান (কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি)। তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ভাগ করে নেন।
আলোচনায় ডা. শুভঙ্কর চৌধুরী বলেন, “বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস শুধুমাত্র একটি রোগ নয়; এটি আমাদের জীবনযাত্রা ও সমাজের পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। চিকিৎসা পদ্ধতিও বদলেছে—আগে যেখানে কেবল চিকিৎসার ওপর জোর দেওয়া হতো, এখন গুরুত্ব পাচ্ছে প্রতিরোধ, শিক্ষা ও সচেতনতা। রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করা, সমন্বিত যত্ন ও নিয়মিত সচেতনতা বজায় রাখা—এই তিনটি বিষয়ই সফল ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার মূলভিত্তি। আমাদের লক্ষ্য হলো ডায়াবেটিস কেয়ারকে আরও সহজলভ্য, শিক্ষানির্ভর ও সমন্বিত করে তোলা, যাতে মানুষ নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন ও আত্মনির্ভর হতে পারেন।”
অলিম্পিয়ান ও অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত জয়দীপ কর্মকার বলেন, “মণিপাল হাসপাতালের মতো একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ডায়াবেটিস সচেতনতা হাসপাতালের বাইরেও ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। মণিপাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস এবং সুগার মনস্টার-এর মতো উদ্যোগ শুধু চিকিৎসার দিক নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রেরণাও জাগিয়ে তুলছে। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি—ফিটনেস ও সচেতনতা পাশাপাশি চললে তবেই সমাজ হবে আরও সুস্থ।”
দিনের শেষে ইএম বাইপাস ইউনিটে মুখ্য অতিথি হাসপাতাল ভবনটি নীল আলোয় আলোকিত করে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-এর বৈশ্বিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন। অন্যদিকে, ঢাকুরিয়া ইউনিট ১০ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত নীল আলোয় সজ্জিত থাকবে—যা ডায়াবেটিস সচেতনতা ও যত্নে মণিপাল হাসপাতালের অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রতীক।

Comments

Popular posts from this blog

দক্ষিণ ২৪পরগনা ঠাকুরপুকুর সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নতুন প্রযুক্তির রেডিওথেরাপি মেশিন এর শুভ উদ্বোধন

SH Binayak Multi-speciality Hospital, in association with the Institute of Breast Disease Kolkata and Asian Medical Foundation, launches "SNEHA SPARSHA" - A Dedicated Homecare Initiative for Cancer Patients

बैंक ऑफ इंडिया ऑफिसर्स एसोसिएशन ! पूर्वी भारत शाखाओं की, 60वीं वार्षिक आम सभा की बैठक !